* অপরাধ বিবেচনায় হাসিনার সাজা যথেষ্ট নয়-সালাহউদ্দিন আহমদ
* দেশের বিচারিক ইতিহাসে এই রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে -নাহিদ
* হাসিনার একমাত্র শাস্তি দেশে এনে ফাঁসি নিশ্চিত করা-গণঅধিকার পরিষদ
* ফ্যাসিবাদীদের কি হয় আজকে শিক্ষা নেওয়ার দিন -ফরহাদ
* এই রায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে -ইসলামী আন্দোলন
* হাসিনার প্রাণদণ্ডের রায়ে ‘গণআঙ্কা পূরণ হয়েছে’-জামায়াত সেক্রেটারি
* রাষ্ট্রীয় গুম-খুনের বিরুদ্ধে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে-খেলাফত মজলিস
* এ রায় শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের বিজয়ের ঐতিহাসিক রায় -এবি পাটি
* সুবিচার নিশ্চিতে রায় কার্যকর জরুরি-ইসলামী ছাত্রশিবির

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদালতের দেয়া এ রায়কে ঐতিহাসিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক। একইসঙ্গে শেখ হাসিনাসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
শেখ হাসিনার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, অপরাধ বিবেচনায় সাজা যথেষ্ট না হলেও এ রায় মাইলফলক। সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। সালাহউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এ রায় মাইলফলক। অপরাধ বিবেচনায় এ সাজা যথেষ্ট না হলেও আগামীতে কোনো সরকার বা কোনো ব্যক্তি যেন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে তার জন্য উদাহরণ হবে এ রায়। তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, ফ্যাসিবাদ যত শক্তিশালী হোক, যতই ক্ষমতা দখলে রাখুক, তাদের একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণদণ্ডের রায়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষের গণআকাক্সক্ষা পূরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার। সোমবার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের নেতা গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জুলাই-অগাস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, আমাদের প্রায় ১৪০০ ছাত্র-জনতার জীবন। প্রায় ৪০ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়ে বেঁচে আছেন। তাদের আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক অবদানকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এটা বিচারের গুরুত্বপূর্ণ দিন, এই কারণে আমরা বলছি, দেশের ১৮ কোটি মানুষের যে গণআকাক্সক্ষা ছিল এই রায়, ঘৃণ্য মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের আগে করে যাবেন, এটা আমাদের দাবি ছিল। সেটি পূরণ হয়েছে।
শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দেওয়া রায় দেশের বিচারিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে যে গুম, খুন, ধর্ষণ হয়েছিল, মানবাধিকার, ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিলে, তার সবকিছুর বিচার আমরা আজ পেয়েছি। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। সোমবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আজ ঐতিহাসিক দিন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেই রায় এসেছে। সেই রায়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই যেদিন আমার ভাই আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়েছিল, সেদিনই আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই হত্যার বিচার আদায় করেই ছাড়বো। রায়ের পর ভারতের উদ্দেশ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, হাজারের অধিক হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা এবং মৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আপনারা (ভারত) যদি বাংলাদেশে তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করেন তবেই বাংলাদেশের সাথে আপনাদের যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপরাধের একমাত্র শাস্তি বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি নিশ্চিত করা বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। সোমবার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাশেদ খান লিখেছেন, শেখ হাসিনা যাদের জন্য মায়া করে নাই, তাদের উচিত না শেখ হাসিনার জন্য মায়া দেখানো। শেখ হাসিনার অপরাধের একমাত্র শাস্তি দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, শুধু রায় ঘোষণা নয়, রায় কার্যকর করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমদ। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ইউনুস আহমদ বলেন, এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়েছে। মজলুম জনতার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এই রায় আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জনতার ওপরে দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা বিগত ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করেছিল। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছিল। হাজারো শহীদের রক্তের প্রতি ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের সর্বোচ্চ শাস্তি কাম্য ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়েছে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জনগণকে গুম-খুনের বিরুদ্ধে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায়কে ঐতিহাসিক এবং শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের বিজয়ের ইতিহাসের রায় বলে মন্তব্য করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি(এবি পার্টি)। সোমবার রায়ের পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খুনি হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের রায়ে দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে মারাত্মক আহত করার অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।